হাতিয়া থেকে মনপুরার চরে ঘুরতে যাওয়া: একটি স্মরণীয় ভ্রমণ।

in #travellast month (edited)

আমরা ১৭ জন বন্ধু মিলে হাতিয়া থেকে মনপুরার বিভিন্ন চরে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের এই ভ্রমণের মূল আকর্ষণ ছিল নৌকায় করে চরের সৌন্দর্য উপভোগ করা এবং সেখানকার প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছু সময় কাটানো। সকাল সকাল হাতিয়া থেকে যাত্রা শুরু করি। নৌকা ছিল আমাদের এই ভ্রমণের প্রধান বাহন, যা পুরো যাত্রার সময় আমাদের সঙ্গী ছিল।নৌকায় ওঠার পরই আমরা আনন্দে মেতে উঠি। সবাই মিলে গান গাইতে শুরু করি, কেউ কেউ গিটারের সুরে সুর মেলাতে থাকে। ঢেউয়ের তালে তালে নৌকাটি যখন এগিয়ে চলছিল, তখন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আমাদের মনকে আরো বেশি মোহিত করছিল। কিছুক্ষণ পর আমরা চরে পৌঁছাই এবং সেখানে আমাদের আনন্দ আরও বেড়ে যায়।চরে পৌঁছে আমরা প্রথমেই খেলার আয়োজন করি। ফুটবল ছিল আমাদের প্রধান খেলা। আমরা সবাই মিলে একসাথে খেলা শুরু করি। বালুকাময় চরে খেলার আনন্দই ছিল আলাদা। সবাই নিজেদের সাধ্যমত চেষ্টা করছিল, আর সেই সময়টা ছিল আমাদের সবার জন্য বিশেষ মুহূর্ত। খেলার পর আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে মিলে মিশে গান গাই এবং আনন্দ করি।চরে ঘুরতে গিয়ে আমরা মাছ ধরার পরিকল্পনা করি। কেউ কেউ জাল নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়ে, আর কেউ কেউ কাঁকড়া ধরার মজায় মেতে ওঠে। এটি ছিল আমাদের সবার জন্য নতুন এবং মজার অভিজ্ঞতা। নদীর জলে যখন মাছ ধরছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল আমরা প্রকৃতির আরও কাছাকাছি চলে এসেছি। কাঁকড়া ধরার সময় অনেক মজার ঘটনা ঘটে, কেউ কেউ কাঁকড়ার কামড়ে ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে, আর বাকিরা হেসে ওঠে। সেই মুহূর্তগুলো ছিল একেবারেই স্মরণীয়।প্রায় বিকাল ৩টার দিকে আমরা নৌকায় করে মনপুরার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। তবে তখন নদীর ঢেউয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। ঢেউয়ের এই তীব্রতা আমাদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বিশেষ করে আমার কিছু বন্ধু, যারা ঢেউয়ের তীব্রতা দেখে ভয় পেয়ে যায়, তারা কান্না শুরু করে দেয়। কিন্তু আমাদের দলের বাকিরা তাদের সাহস দেয় এবং তাদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে যে, আমরা নিরাপদেই মনপুরা পৌঁছে যাব। ঢেউয়ের সাথে নৌকার সেই দোলার মুহূর্তগুলো ছিল আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং, তবে একসাথে থাকায় আমরা সেই ভয়কে জয় করতে পেরেছিলাম।দীর্ঘ ২ ঘণ্টা পর আমরা মনপুরায় পৌঁছাই। সেখানে পৌঁছে সবাই মিলে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করি। মনপুরার পরিবেশ ছিল অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। আমরা সেখানকার স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখি এবং কিছু স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহ করি। তবে আমাদের মূল পরিকল্পনা ছিল হাতিয়া ফিরে যাওয়া, তাই খুব বেশি সময় সেখানে কাটানো সম্ভব হয়নি।প্রায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমরা আবার হাতিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। সেই সময় নদীর ঢেউ কিছুটা কমে এসেছিল, তাই ফেরার পথ ছিল তুলনামূলকভাবে শান্ত। আমরা নৌকায় বসে গল্প করতে করতে সময় কাটাই। দিনভর চরে ঘুরে এবং খেলা করে আমাদের সবাই কিছুটা ক্লান্ত ছিল, তাই ফেরার সময় বেশিরভাগ বন্ধুই ঘুমিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা পর আমরা হাতিয়ায় পৌঁছাই। হাতিয়ায় পৌঁছে সবাই একে একে

1000078328.jpg

1000078303.jpg

1000078315.jpg

নিজেদের বাড়ির দিকে রওনা দেয়।এই ভ্রমণটি আমাদের জন্য একটি বিশেষ স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমরা শুধু চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করিনি, বরং একসাথে মিলে মিশে আনন্দ করেছি, নতুন কিছু শিখেছি এবং ভয়কে জয় করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এই ধরনের ভ্রমণ আমাদের বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করেছে এবং আমাদের জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায় হয়ে থাকবে।