চিঠি দিবস উপলক্ষে রাজামশাইকে লেখা নীলের একটি অপ্রকাশিত চিঠি।

in আমার বাংলা ব্লগ16 days ago

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


InShot_20240905_190118776.jpg








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



InShot_20240903_122946300-removebg-preview.png

সবাইকে পুস শুভেচ্ছা। আপনারা জানেন তো আজও কিন্তু পুস তরতরিয়ে ছুটছে৷

পুসের ওঠা নামার মতো জীবনের ওঠানামাও আছে৷ সেই উত্থানপতনের ভিড়ে যা একেবারে হারাতে বসেছে তা হল পত্রসাহিত্য৷ মানে চিঠি লেখা৷ ফোনের ব্যবহার যেদিন থেকে বেশি হয়েছে সেদিন থেকে চিঠি লেখার সংস্কৃতি আস্তে আস্তে করে মুছে গেছে। আজ তো অফিসিয়াল চিঠিপত্র ছাড়া কোন চিঠি আসে না আর কেউ লিখে না। অথচ একটা সময় পত্র সাহিত্যের কি বিরাট জায়গা ছিল সাহিত্যে এবং জীবনে। গত পহেলা সেপ্টেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস। মনুষ্য জীবনের এই ঐতিহ্যবাহী যোগাযোগের মাধ্যমকে মানুষের মধ্যে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনেই চিঠি দিবস উদযাপন করা হয়। প্রায় চার দিন কেটে গেছে, আমারও খেয়াল ছিল না। আজ হঠাৎ মনে পড়তেই ভাবলাম একটা চিঠি লিখি।

আমি আগে বলেছিলাম আমার জোনাক সভ্যতা বইটি একটি প্রেমের অনুভূতির কথা নিয়ে তৈরি। যার নায়ক হলেন রাজামশাই এবং নায়িকা নীল। আপনাদের সাথে ভাগ করে নেব তা বইতে নেই। বলা চলে অপ্রকাশিত। এই প্রথমবার জনমাধ্যমে প্রকাশ করতে চলেছি। আশা করব আপনাদের ভালই লাগবে।



প্রিয়
রাজামশাই,

চিঠি লেখার কথা মনে পড়তেই ভাবছিলাম সম্বোধনে তুমি বলব না আপনি। চিরকাল 'তুমি'ই বলেছি। তাও কেন যে এমনটা মনে হল... কয়েক মাস যাবৎ তোমার অনুযোগে বুঝি আমাদের সম্পর্কের মাঝের নদীটি চওড়া হয়েছে৷ কিন্তু কেন যে এমন হল। আমি বদলে গেছি বলে ঘন্টার পর ঘন্টা শুনি৷ কখনও ভেবে দেখেছ একটা মানুষ কখন বদলায়? সম্পর্কতো আজকের নতুন নয়। দীর্ঘদিন তোমায় জড়িয়ে বেঁচে থাকি৷ হঠাৎ করে বদল ঘটে?

আমার কি মনে হয় জানো, আমাদের সম্পর্কটারই বদল ঘটেছে৷ বহুদিন হলেও আমার স্পষ্ট মনে পড়ে তুমি একদিন মাঝরাতে হঠাৎ করেই প্রেম নিবেদন করেছিলে। আমি হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিসের অভাব? কি চাই? তুমি কি বলেছিলে মনে আছে? 'নীল সবই আছে, সাম্রাজ্যে উঁচু উঁচু দেওয়াল, বিশাল ফটক, পাখি, রাজসভা, আমার ঘরে আলো নেই৷ তুমি প্রেম দিতে পারো?' বুকের ভেতর তরঙ্গ খেলে গিয়েছিল। কিচ্ছু ভাবিনি। চোখ বন্ধ করে বলেছিলাম 'পারি৷ এতোদিন তোমারই অপেক্ষা করেছি। সমস্ত প্রেম উজাড় করে দিয়ে দেব।' আমি দিলাম। তুমিও দিলে। তুমি ভালোবাসতে চাইলে নদীকে। আমি তোমার জন্যই নদী হলাম। ছলাৎছলাৎ করে বইতে শুরু করলাম। বিকেলের মৃদু-মৃদু বাতাসে আমি কেঁপে উঠলে তুমি ছড়িয়ে দিতে হেম বর্নের রোদ৷ তোমার নৌকা তখন আমার বুকের ওপর পাল তুলে দিত। রাজামশাই, এই তীব্র প্রেমে আমি যে কখন মহাসাগরে বিলীন হয়ে যেতাম কোনদিন সময়ের টের পাইনি৷

ধীরে ধীরে তোমার চাওয়া বদলালো। আমায় বোঝালে সম্পর্কের বদল আসে। ধাপে ধাপে উঠতে হয়৷ আমি খুঁজে পাইনা ঠিক কোথায় আমাদের গন্তব্য। তবে তুমি আর আমার ভেতর অপরাজিতা চাইলে না৷ স্ত্রী চাইলে। মা চাইলে। নারী চাইলে। অধিকার চাইলে। দাবী চাইলে৷ নদীর বুকে বাঁধ দিলে। প্রাপ্তির হিসেব কষতে শুরু করলে। সে যেন চিত্রগুপ্তের খাতা। কোথাও গরমিল হলেই আঁচড়কামকড়৷ ক্ষতবিক্ষত হয়ে আমিও প্রত্যাঘাত করেছি। তুমি শেখাতে চাইলে অধিকারবোধ থেকেই এমন হয়। আমি শিখতে শুরু করলাম। তুমি নতুন করে রঙ চেনাতে শুরু করলে আমিও চেষ্টা করলাম। পারলাম না৷ যতবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছি ভেতরের জেদি মানুষটা বেরিয়ে এসে আমায় প্রহার করল! তুমুল চিৎকার করে বলল 'কিসের জন্য পরিবর্তন? রাজামশাই তোমায় যেমন দেখে প্রেম চেয়েছিলেন তেমনটা আজ আর পছন্দ নয়?' আমি নিজেকে উত্তর দিতে পারি না।

আঘাত আর প্রত্যাঘাতের মাঝে ক্লান্তি নেমে এলো রাজামশাই। আমি শান্ত হলাম। মৌন হলাম। দেখলাম তুমি চাওয়া-পাওয়ার দৌড়ে দৌড়োতে দৌড়োতে প্রেমটা বাঁচতেই ভুলে গেছ। হিসেব তো ব্যবসায়ীরা করে। কিন্তু পূজারীরা? আমি তো তোমার হাত ধরে পুজো করতে এসেছিলাম প্রিয়৷ প্রাপ্তির হিসেবে নয় অনুভূতিগুলো বাঁচতে এসেছিলাম। মহাসাগরের মাঝে মহাপ্রেমের অনুভূতি৷ সেখানে সংসার নেই৷ দুর্বার গতি আছে৷ দুর্বলতা আছে। গোপনে নিভৃতে উড়তে থাকা প্রজাপতি আর অসংখ্য অপরাজিতা আছে।

রাজামশাই, পৃথিবীর সমস্ত ঘূর্ণন একই রকম হবে এই কি আমাদের চাওয়া ছিল?

উত্তর দিও। তোমারই পেলবতার অপেক্ষায় আজও সমস্ত বিনিদ্র রাত কেটে যায়৷

তোমার, অপরাজেয় নীল



আপনাদের উত্তরের আশায় রইলাম বন্ধুরা। আবার আগামীকাল আসব অন্য কিছু নিয়ে। আজ আসি৷

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণচিঠি, ক্রিয়েটিভ রাইটিং
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিখন


1000216466.jpg


৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


Drawing_3.png

1000205458.png

InShot_20240903_185715330.jpg

1000205505.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 16 days ago 

চিঠি দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন রইলো আপু। আসলে একটা সময় মানুষ চিঠির জন্য খুবই আগ্রহে অপেক্ষা করতো। কখন চিঠি আসবে আর প্রিয় মানুষের হৃদয়ের কথাগুলো চিঠির মাধ্যমে পড়বে। আসলে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এখন চিঠি হারিয়ে গেছে আমাদের কাছ থেকে। আপনার পোস্ট পড়ে বেশ ভালো লাগে। ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 15 days ago 

আপনি আমার পোস্টটি পড়লেন এবং সুন্দর একটি মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহ দিলেন। আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে।

 16 days ago 

এই চিঠি যেন টেনে নিয়ে গেল কোন এক অনির্দিষ্ট কিনারায়। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে গেলে অনেকটা হেঁটে উঠতে হয়। প্রতিটা আবেদন মেঘলা কিরণের মত হেলে এসে পড়ে মাটিতে। আর তার মধ্যেই আবছায়া কুয়াশারা কখন যেন জড়িয়ে যায় চোখের আনাচে-কানাচে। এই চিঠির সম্বন্ধে এটুকু কথাই না হয় বলে গেলাম।

 15 days ago 

তোমার ভাল লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম। ভাল থেক৷