আজ কৌশিকী অমাবস্যা। দিকে দিকে চলছে তারা মায়ের পুজো। আসুন গল্প বলি।

in আমার বাংলা ব্লগ19 days ago

আজ কৌশিকী অমাবস্যা। তারা মায়ের পূজায় মেতে উঠেছে বাঙালি।

🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱


Onulipi_09_03_12_05_37.jpg

🙏🙏সকলকে স্বাগত জানাই🙏🙏

আজ কৌশিকী অমাবস্যা। তন্ত্রসাধক ও কালীসাধকদের কাছে আজকের দিনটি এক বিশেষ মাহাত্ম্য রাখে। দিকে দিকে আজ সারারাত জুড়ে চলছে মহাযজ্ঞ এবং পূজাপাঠ। আজ দিনটির সাথে জড়িয়ে আছে বীরভূম জেলার তারাপীঠের ইতিহাস এবং প্রচলিত লোককথা। তারা মা তারাপীঠের পূজিতা দেবী। আর তারাপীঠ মানেই তন্ত্র সাধনা ও মহাশ্মশান। আমরা জানি সেখানে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন স্বয়ং বিখ্যাত কালীসাধক বামদেব বা বামাক্ষ্যাপা। আসুন আজ তারাপীঠ ও কৌশিকী অমাবস্যার গল্প বলি।

IMG_20240902_183219_121.jpg

তারা মায়ের মূর্তি ও বামাক্ষ্যাপা

সে অনেকদিন আগের কথা। তারাপীঠ তখন তন্ত্রসাধকদের সিদ্ধভুমি। সেখানেই তপস্যা করতেন বামাক্ষ্যাপা। তাঁকে প্রথমে স্থানীয়রা পাগল বলে উপহাস করলেও পরে তার সাধনা এক বিশেষ জায়গায় তাঁকে নিয়ে যায়। নিজের বিভিন্ন ক্ষমতা তিনি লোকচক্ষুর সামনে নিয়ে আসতে থাকেন। তারপর থেকে দেরি হয়ে ওঠেন সকলের পরিত্রাতা। তাঁর স্মৃতিধন্য স্থান তারাপীঠ সিদ্ধপীঠ। পঞ্চমুণ্ডীর আসনে রোজ পুজিতা হন দেবী কালীর আর এক ভিন্ন রূপ, তারা। কিন্তু কৌশিকী অমাবস্যার তিথির মূলে টান দিলে আমরা পৌঁছে যাই চন্ডীপুরানের গল্পে। দেবী তখন যুদ্ধ করছেন অসুরদের সঙ্গে। মহাপরাক্রমশালী দুই অসুর শুম্ভ এবং নিশুম্ভ স্বর্গলোক আক্রমণ করে দেবতাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। এই দুই অসুরকে বধ করবার জন্য দেবী মহামায়া কৌশিকী রুপ ধরে অবতীর্ণ হন। এরপর দুই পরাক্রমশালী অসুর শুম্ভ এবং নিশুম্ভকে বধ করে দেবতাদের বিপদমুক্ত করেন। আর সেই তিথিই পরিচিত কৌশিকী অমাবস্যা হিসাবে।

IMG_20240902_183452_528.jpg

মণ্ডপ

আজ সেই কৌশিকী অমাবস্যার রাত। তারাপীঠের তারা মায়ের মন্দিরে সকাল থেকে শুরু হয়েছে পূজোপাঠ। ভোরে মঙ্গল আরতির মধ্য দিয়ে যে পূজার শুরু হয়েছে তা চলবে আজ সারারাত ব্যাপী। সকালে আরতির পর মাকে নিবেদন করা হয় শীতল ভোগ। সেখানে থাকে ফল, মিষ্টি, ক্ষীর। এরপর রাজবেশে পূজিতা হন দেবী তারা। দুপুরের ভোগে থাকে পোলাও, সাত রকম ভাজা, ভাত মাছ ইত্যাদি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি পদ হলো পোড়া শোল মাছ। এটি তারাপীঠের একটি পুরনো রীতি। কৌশিকী অমাবস্যার দিন এভাবে শোল মাছ নিবেদন করা হয় মা তারাকে। সারা রাত ব্যাপী চলে যজ্ঞ৷ এমনকি শ্মশানেও ভিড় হয় তান্ত্রিকদের। আজকের এই রাতে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে তান্ত্রিকরা পূজাপাঠে মেতে থাকেন সারা তারাপীঠ জুড়ে।

IMG_20240902_183605_153.jpgIMG_20240902_183531_079.jpg

মণ্ডপে মণ্ডপে তারা মায়ের মূর্তি

কিন্তু এখন শুধু তারাপীঠেই এই পুজো সীমিত নেই। এর ব্যপ্তি এখন পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন প্রান্তে। চারদিকে গমগম করে পালিত হচ্ছে কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে তারা মায়ের পূজা। আমার অঞ্চলেও বাড়ির চারপাশে সারারাত জুড়ে শোনা যাচ্ছে মাইক এবং মন্ত্র পাঠের শব্দ। আর আমি তার মাঝেই বসে টাইপ করছি এই প্রতিবেদন। কিছুক্ষণ আগে বেরিয়েছিলাম একটি কাজে। তখন আশপাশে দু একটি দেবী মূর্তির মন্ডপে ঘুরে ছবি তুলে আনলাম। চারপাশ সেজে উঠেছে আলোয় আলোয়। আর মাঝখানে পূজিতা হচ্ছেন মা তারা।

IMG_20240902_183437_687.jpgIMG-20240902-WA0029.jpg

এই দিনটির মাহাত্ম্য বোঝাতে গেলে আরেকটি ঘটনার কথা বলতেই হয়। তারাপীঠে আজকের দিনেই ১২৭৪ বঙ্গাব্দে শিমুল গাছের তলায় সিদ্ধি লাভ করেছিলেন কালীসাধক বামাক্ষ্যাপা। তারপর থেকেই এই তিথির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ব জুড়ে। চারপাশে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে সারারাত ব্যাপী মা তারার সাধন ভজন। আর বিভিন্ন দিকে মানুষ মেতে ওঠে এই পূজোকে ঘিরে। তাই আজ কৌশিকী অমাবস্যায় পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন প্রান্তে সারারাত জুড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মা তারার এই বিশেষ পূজা।

আপনাদের সামনে তুলে আনতে চেষ্টা করলাম তারাপীঠের কিছু প্রসঙ্গ এবং কৌশিকী অমাবস্যার কথা। এসবের বাইরেও বীরভূম জেলার তারাপীঠ বাঙালির এক বিখ্যাত পর্যটন স্থান। প্রধানত তীর্থক্ষেত্র হলেও ভ্রমণ প্রিয় বাঙালি সময় পেলেই পৌঁছে যায় তারাপীঠে। আর একটি দিনের জন্য এমন ছোট্ট একটি ভ্রমণ গন্তব্য কার না পছন্দ হয়? আর সেখানে গেলে আশপাশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক পর্যটন স্থান ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন বাঁধ এবং অন্যান্য মন্দির। কাছে পিঠে ঘুরে আসা যেতে পারে সাধক বামাক্ষ্যাপার বাড়ি। সবটাই বেশ উপভোগ্য।

আশা করি আজকের পোস্ট সকলের ভালো লেগেছে। তারাপীঠ গেলে অবশ্যই জানাবেন। বলা যায় না, আমিও জুড়ে যেতে পারি আপনার সঙ্গে। ভালো থাকবেন সকলে।


pensive-puss-in-boots.png


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ
ছবি এডিটিং সৌজন্য
অণুলিপি


(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


puss_mini_banner.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

44902cc6212c4d5b.png


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

এই পোস্টটি @philhughes এর মাধ্যমে টিম 7 দ্বারা আপভোট/সমর্থিত হয়েছে। আমাদের দল সম্প্রদায়ে যোগ করে এমন সামগ্রী সমর্থন করে৷

image.png

 17 days ago 

বাহ,কৌশিকী অমাবস্যা আপনার নামের সঙ্গে কিন্তু মিলে গেছে দাদা।অনেক ইতিহাস তুলে ধরেছেন তারা মায়ের।সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে মায়ের নিবেদনে তৈরি সুন্দর সুন্দর ভোগের আয়োজনগুলি ও পুরোনো রীতির কথা জেনে।ধন্যবাদ আপনাকে দাদা।

 16 days ago 

ভীষণ ভালো লাগলো বোন। আমার পোস্ট পড়ে তোমার মনোজ্ঞ মন্তব্য পেয়ে আমি ভীষণ খুশি।

আমার বাংলা ব্লগের সকল ভালোবাসী সদস্যবন্ধুদের শুকরিয়া। 🙏

আমি তোমাদের জন্য ভালো থাকুন, ভালো রাখুন। 💪

অসংগঠিত বাঙালি সম্প্রদায়ের উজ্জ্বল কণ্ঠশিল্পী একজন। 🌟

ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও ঐক্যের রানাড়ি হোক বাঙালি। ❤️